মুশফিকুর মাহির কবিতা


 

১.

বসন্ত বিভ্রম—

ভুলে যাওয়া বিগত মৌন হাওয়ার রাতে 

শিশিরের আশ্চর্য ছলনা। 

কেবল পতনের সুর কিছুটা রোমাঞ্চকর, 

মৈথুনে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে দুপুর।

তবুও হাওয়া কিছুটা উদাসীন, 

সম্ভ্রম হারানো ফুলের দোল খাওয়া 

এবং হৃদয়ে ফুটে থাকে যুবতীর কান্না মিশ্রিত চোখ।

অলিক উপস্থাপনার আড়ালে থেকে যায় বিমর্ষ

আঙ্গুলের অপার্থিব দুঃখ রেষ । 

ছায়া নেমে আসা জলে প্রতীয়মান হতে পারে 

একটি নিঃসঙ্গ বৃক্ষের বোবা আত্মচিৎকার।

যার হৃদয় একটি শূন্য খাঁচা;

আবদ্ধ রাখা যায় না এমন অপারগতা মেনে 

আনন্দিত হতে হয় পাখি ও পাতার যৌথ প্রস্থানে।




২.

দুঃখের সমস্ত আঙিনায় আমি চষে বেড়িয়েছি।

জেনেছি অভাবের চেয়ে দীর্ঘ হয়ে উঠতে পারেনি কোনো প্রেম। 

জলকণার ঋণ ভুলে যেতে বসেছে গৃহত্যাগী ঝিনুক।

খোলস যার মর্মবেদনা ফুটিয়ে তুলে সুনিপুণভাবে।

অবসন্ন রাতে

পেঁচার নির্জনতা গ্রাস করে ফেলেছে শুষ্ক হৃদয়।

শস্যক্ষেত ধ্বংস হয়ে গেছে, 

গর্ভে গর্ভে জন্ম নিচ্ছে কেবল প্রতারণা, 

মহামারী সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছে ঠোঁট, 

অথচ ঘৃণায় পুরুষ নারীকে চুমু খাচ্ছে না।

বেদনাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে 

অবুঝ শিশুর পাতের ভাতের মতো।

দুঃখের সমস্ত আঙিনায় আমি চষে বেড়িয়েছি। 

কামনা বাসনা ভুলে দেখতে চেয়েছি 

এখনো রাত হলে কারা ইঁট ভাটার আগুন নিয়ে আসে বুকে!

আর কারা অধিকার খর্ব করে পতঙ্গের,

কারা ভেঙ্গে দিতে চায় শৃঙ্খলাবদ্ধ পিঁপড়ার সন্ধি, 

প্রেমহীন দুঃস্থ হৃদয় দেখে কারা হো হো করে হেসে ওঠে,

হৃদয়ের দরজা বন্ধ রেখে কারা সঙ্গমে মেতে থাকে দীর্ঘ রাত?

দুঃখের সমস্ত আঙিনায় আমি চষে বেড়িয়েছি,

আর কেবলই খুন হয়েছি নিজের ভেতর।





৩.

আমি এক "সম্ভাবনা" খুনী।

পাতের ভাত এঁটো করে 

বহুবার চলে গেছি অভাবের খোঁজে।

চৌকাঠে আসা বাসন্তী বাতাসকে ফিরিয়ে দিয়ে বলেছি 

শীতের জরাজীর্ণতাই ঢের ভালো।

একাকিত্বের লাঞ্ছনা সইবার ক্ষমতা যদিও ছিলো না,

তবু কেউ হাত বাড়ালে 

উল্লেখ করেছি ফসকে যাওয়ার ভয়।

আমি এক "সম্ভাবনা" খুনী। 

চোখ তুলে তাকালেই ছোঁয়া যেতো সুমিষ্ট ফল 

অথচ তা ছিনিয়ে নিতে দিয়েছি অনিষ্টকারীদের।

আমি একটা অপদার্থ, পলাতক।

কেবল মুখাবয়ব আড়ালে করেছি সকল প্রত্যাশা থেকে।

সুখ কামনা করেছি 

অথচ

হৃদয়ের আসন পেতে দিয়েছি বারংবার বিষাদের জন্য।

সমস্ত ভালোবাসার বিপরীতে নিজেকে করেছি কেবলই ঘৃণা, 

ভেবেছি অকর্মণ্য। 

হেলায় ফেলায় কাটিয়েছি সময়।

যোগ্যস্থানে পৌঁছাতে পারিনি সংকীর্ণতায় 

কিংবা স্বদিচ্ছার অভাবে।

হে নগরীর বিষন্নতা— 

আমার ফাঁসি দিতে পারো, 

জীবনের সাথে যে অনাচার আমি করেছি 

তার পাপমোচন হবে না স্বেচ্ছা মৃত্যুতেও। 

তবুও আজ প্রকাশ্যে আমি এই খুনের শাস্তি দাবী করি 

মহামান্য সিলিংয়ের কাছে।