১
চূর্ণ শব্দের বিষণ্ণতা
•
অদৃশ্যের জড়তায় বদ্ধ এক ঘূর্ণিবায়ু— শতধারা ভেদে স্থির, তবু প্রতিকূলে ঘনায়মান, বাক্যের অপূর্ণ দেহে, চূর্ণ শব্দের বিষণ্ণতা; যেন রূপান্তরিত শূন্যে এক আদিম অতলসন্ধান।
কেন এই ব্যর্থ বিন্যাসে নামহীন উপপাদ্য? অর্থের প্রান্তে গড়িয়ে পড়ে স্ফটিক-স্মৃতি। তোমার ছায়া— ধ্বংসের উপক্রমণিকা, যে উচ্ছ্বাসে বেঁচে থাকে নির্বাসনের ঘন মিথ্যে।
সেখানে কোনো মানে নেই, শুধু অভিক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ার শূন্য মীমাংসা। তোমার অপ্রকাশিত নাম, যেন মৃত নক্ষত্রের চিহ্ন-মলিন।
অন্তিম শ্বাসে, সময়ের সুতোয় গাঁথা শতাব্দীর অন্ধকার অতীত। আমি, বিদ্যুৎহীন নক্ষত্রলোকের অপেক্ষাকৃত ভারী ছায়াপথ, তোমার দিকে ঘনীভূত হচ্ছি।
বিস্মৃতির এই অনুক্ষণ ধাপে, তোমার স্বর—শতাব্দীর জমাট প্রতিধ্বনি। আমি অবশেষে ভেঙে পড়েছি কবিতার অক্ষরবৃত্তে, অসীমতাকেই আমার পরিচয় করে।
২
রূপান্তরের আগমনে যে বেদনায় হারায় আশ্রয়
•
বিষাদবর্ণিত, উপেক্ষিত চূর্ণিত স্মৃতির পুনরাবৃত্তি— তথাপি বিধ্বস্ত পরিসরের সংজ্ঞাহীন প্রবাহ, এবং সে কোথায়, যা আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এক সময়? হাস্যরেখার চেয়েও নির্বিকার, অদৃশ্য অধিকারীর পায়ের ধ্বনি সামন্তের মন্দ্রাকৃতি-শূন্যতা থেকে উঠে আসে, অস্তিত্বের সলিলবৈদ্যুতিন স্রোতের মতো।
দূরবর্তী শিলালিপির প্রাচীন ভাষার শেষে— রূপান্তরের আগমনে যে বেদনায় হারায় আশ্রয়, খণ্ডিত সৌন্দর্যের এক আশাহীন রাত্রি। অমোঘ বিষণ্নতায় ভরা এ খন্ডহীন প্রহর, গোলকধাঁধার মতো দুর্ভেদ্য প্রশ্নে নিমগ্ন, যেখানে শব্দের সীমারেখা আর শরীরের বিচ্ছেদ অসম্ভব।
অচিন্ত্য দৃষ্টির মাধ্যমে জীবনজয়ী ঘূর্ণি, যত্নে লুকিয়ে রাখে আলোকমালা, কিংবা মৃত একধারা— যার ছায়ায় সূর্যের নিরানন্দ অঙ্গুলি সংকেত দেয়, এবং ইন্দ্রিয়ের নীচে নিঃশব্দ কবিতার মৃত্যু।
পিপঁড়ের সম্মিলনেও নেই নির্বিকার ঘ্রাণ, কিন্তু তবু অতীতের জীর্ণাকীর্ণ হাওয়া ফিরিয়ে আনে সে অভ্যন্তরীণ পটভূমি, যেখানে অস্তিত্ব ব্যর্থ হয় বিশ্বস্ততার সমুদ্রতীরবর্তী স্নিগ্ধ পথের শেষে।
অথচ, অগণিত নদী ফুরোয়, যেমন ভাঙা ঘর পাড়ি দেয়, আর আশ্রয়ের অভাব আমাদের সঙ্গে ফেরি করে— ভাসমান একাত্মতার কঠিন ইস্পাত তলে, অথবা সেগুলো বিলীন হয়ে যায় ঐশ্বর্যের ভারী ছায়ায়।
৩
অগ্নিপথের ওপর উজ্জ্বল তপ্তপদ্ম
•
ভাসমানতাকে যদি কখনো অনুভব করা যায়, তা হলে তা একমাত্র সীমাহীন অন্ধকারের অন্তর্দৃষ্টিতে ফুটে ওঠে, যেখানে বাষ্পীয় স্তরগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কেবল উলটানো মুহূর্তগুলির ধারাবাহিকতায় পতিত হয়—তোমার দৃষ্টি সেই এক অক্ষরবাহিত পূর্ণতা, যা প্রতিটি ভগ্নাংশের ছায়ায় অস্পষ্ট, এক বিচিত্র মধুমেহের অগ্নিসংযোগে গলে যায়, যেন স্তিমিত স্রোত বয়ে যায় শিরা ও দেহের সীমানায়।
সেখান, যে গভীরতা কখনো স্পর্শযোগ্য নয়, সেটি দুর্বোধ্য ব্যাখ্যার কেন্দ্রবিন্দুতে বিভ্রান্তির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ত্রিভুজাকার সত্তার সংজ্ঞায় পরিণত হয়, যে অতীতের উত্তরাধিকারী হঠাৎ একটি দীর্ঘশ্বাসে শোকে আচ্ছন্ন হয়ে যায়, আর চিরকাল বিরাজমান থাকে এক অন্তহীন বক্ররেখা, যা কখনো পৃথিবী বা জগতের সীমাকে স্বীকার করে না।
তুমি, সেই অনুবর্তী ধ্রুবক যে সময়ের কাল্পনিক মুখাবয়বে ভুলে যায় নিজস্ব অস্তিত্বের গভীরতা, তাই একটিই হয়ে ওঠো—এক ব্যতিক্রমী অগ্নিপথের ওপর উজ্জ্বল তপ্তপদ্ম, যা সমস্ত দুঃস্বপ্নের ভেতরও বিস্মৃত, অদৃশ্য।
Social Plugin