প্রেমাংশু শ্রাবণ'র গুচ্ছকবিতা

 


সিলেবাস


মেধাবী ছাত্রের মতো আমি তোমাকে মুখস্থ করি 

পাতা উল্টে উল্টে দেখি অনুচ্ছেদের কেয়ারি করা 

ছোট ছোট ফুল, ক্ষেত, লতার জারি 

নাকের নথের মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লাল ফুলে ভরা 


অনুচ্ছেদের তলার জমিটি বাঁকা, সবুজ ঢাল ;

নিবিষ্ট কিছু পিঁপড়ে আর রঙিন পোকামাকড় 

রুটম্যাচ করে দূরে, শুকনো পাতার আড়ালে কাল 

একলা বিকেল বেলা খুঁজে নিয়ে চলে গেছে দোর 


দ্বিধান্বিত ছাত্রের মতো মন দিই পুনঃপাঠে

ভাবি একই সিলেবাস যেন থাকে আগামী বছর --

মুখস্থ যাচাই করি, স্মরণযোগ্য স্মৃতিরা হাঁটে 

পরিক্ষার দিকে হেঁটে যায় ফলের স্বপ্নে বিভোর 


পঠিত বিষয় লিখি, না দেখে নিজেকে রাখি টুকে 

তোমার অক্ষর দিয়ে অন্ধের মতো লাঠি ঠুকে ঠুকে....! 





স্বপ্ন  ৩৫


নদীমাতৃক দেশে ভেসে চলছে নৌকা জীবন। 

কিছু মরা গাছের ছায়া নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে মাঝি৷ 


সপ্রতিভ তরঙ্গের তুফানে চুল আছড়াচ্ছে সভ্যতা। 

সারি সারি মূর্তির আবহে 

জোছনা-জন্ম খুঁজে পেতে চেয়েছে অভিমানী দুপুর। 


কিছু উচ্চারণ, নিবিড় হাওয়া, 

হাতের রেখা মুছে দিতে চাই। 

পানকৌড়ির মতো ডুব দিয়ে খুঁজে চলছি আমাদের পোড়া ঘর, 

প্রবাহিত নির্জন সুর.... 





ফসলিকথা


যে নদীর ঘাটে রেখে এসেছি 

আমার নৌকার দাঁড় 

আমার অনন্ত ক্ষুধার পাশে  তার

শস্যবর্তনের সমাহার । 

আঁচলে রাঢ়ভূমি। 


বিভক্ত ঋতুর ভাঁজে 

আকন্দফুলের কলির মতো তার মুখ এঁকে রেখে যাচ্ছি 

কবিতার ছদ্মনামে। 


ঠোঁটে তার গাঢ় নিঃসঙ্গতা 

চিবুকের তিলে তার দারুচিনি দ্বীপ ! 


বহুযুগ পর..... 

হয়তো কোন যুবক পান্ডুলিপি খুলে দেখবে 

তার প্রেমিকার মুখ আর 

তোমার মুখশ্রী হুবহু এক 

মৃর্গনাভির ঘ্রাণের মতো তোমার কথা, 

কোনো এক অঘোম দহন দুপুরে 

রহস্যময়ী বাতাসে ছড়াবে 

তোমার চুলের সুবাস ।