মঞ্জিমা'র দুইটি কবিতা

এপিটাফ

এখানে যার ঘরদোর বসতবাড়ি

সে এক আনন্দবিলাসী আলেখলতা আছিল।

আরো মুগ্ধ হয়ে তাকাও

যে রঙ এখন এখানে

সে রঙ তার চোখে বেড়াত রাত্রিদিন।

সে জেগে উঠতো হেসে

ঘুমোতো মগ্নধবল ইচ্ছেয়

এখানে যে মৃত্যুমতী

তোমার পৃথিবীতে সে বাস করে গেছে

অনন্ত-ভালোবাসা-কাল।

তাকে ছুঁলে ভালোবাসাগামী না হয়ে পারবে না।

সে এক আনন্দবিলাসী আলেখলতা আছিল।

আড়ংয়ের ফুল

পায়ে ফুটেছে আড়ং নামের ফুল

ওদিকে তখন বিলাসী একতারা বাজছে সন্ধ্যার পারে

থৈ থৈ করছে নিষিক্ত জলে আলোয় রামধনু

শুনতে পারছ আমাকে আর?

গন্ধ পাবে চাইলেই?

কত যেন মাইল গোনা ফলক হাঁটছে রাতের দিকে

ভোরবেলায় পাশ ফিরে শুই

ঘুম ভাঙলেই থেমে যায় ধুকপুকানি

ভাবি দেখছি

অথচ দু আধখানা দেশের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়েছে

এ ভোরগুলো কান্না হয়ে গেছে

কানে দুলেছে আড়ং নামের দুল

ঝাড়বাতির মতো অপূর্ব আলো

রাজবাড়িতে সন্ধ্যাপুজো চলছে

চলছে গোপালভোগ

উড়নচণ্ডী বারদুয়ারে বসে গাইছে

"আমি তোমার যাত্রীদলের রব পিছে,

স্থান দিয়ো হে আমায় তুমি সবার নীচে।

প্রসাদ লাগি কত লোকে আসে ধেয়ে,

আমি কিছুই চাইব না তো রইব চেয়ে;

সবার শেষে বাকি যা রয় তাহাই লব।

তোমার চরণ-ধুলায় ধুলায় ধূসর হব॥"

ওই যে যখন ধূলায় ধূলায় গাইছে

ঝরছে জল তারাদের জল

ধূপের গন্ধ লেপ্টে গেল বুকের ভেতর

ফুঁ দিয়ে যায় নিজেরজনা

মন্দিরে রাত্রি বাজছে

মেঘের ভিতর নীল আলো জ্বলা চাঁদ

আড়ং ফুল পরা মেয়ে

সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে উঠলো মন্দিরের মূলে

কান থেকে খুলে দিল ফুল

দেবতার সামনে

মেয়ে দেবতাকেও ভালোবাসে।

তুমি এসব শুনতে পারছ?

এই যে বলছি এত কথা

এই যে দ্যাখো গাছ ভরে উঠছে ফুরুশফুলে

লাল হয়ে উঠছে একমাসের গাছ

ছুঁয়ে থাকা যায় যতখানি, থাকো।

যে ফুলে হাত রেখেছ, রাখো।

ঘুমাই ফুল, আড়ং নামের ফুল

ঘুমাই দুল, তারার আলোর দুল।