রাজু রায়ের কবিতা


নাই, নাই, নাই
 

ভীষণ নাই নাই বোধ হয়

রাত বারোটা পেরিয়েছে  নিকষ কালো অন্ধকারে পৃথিবীটা ডুব মেরে রয়েছে। 

ঝিঝির রব পর্যন্ত থেমে গেছে

আর কোনো রাতপাখি ডাকছে না

নিশাচরেরা চলাফেরা বন্ধ করে দিয়েছে

চারিদিক এমন থমথম এমন ভীষণ শব্দ হীন

যে ক্ষণকালের জন্য পৃথিবীটা নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে। 

ভীষণ নাই নাই বোধ হয়। 

কিংবদন্তি শুনি, এ সময়টাকে তেনারা খুব পচ্ছন্দ করেন। 

বের হন ঘোরাফেরা করেন। 

এমনি এক ঘোর তামসিক রাতে আমিও শয্যা ছেড়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ি

হাতড়ে হাতড়ে হোঁচট খেতে খেতে পথ চলি 

পায়ের নীচে

কখনও ভেজা মাটির স্পর্শ টের পাই

কখনও কঠিন কীসে ঠেকে ককিয়ে উঠি

 কত খাল খন্দ পার করে গাছে গাছে ধাক্কা খেয়ে

 ঝোপ ঝড়ের বাহুবেষ্টনী ছিড়ে আমি এগিয়ে চলছি। 

না , ক্রুর জ্বলন্ত চোখ নিয়ে কোনো জন্তু জানোয়ার সামনে এলো

না 

কোনো বিষাক্ত সাপ আমায় কামড়াল না। 

সবকিছু এমন শূন্য এমন খালি যে

ভীষণ নাই নাই বোধ হয়। 

মন্ত্রমুগ্ধ নয়নে আমি শুধু এগিয়ে চলছি সামনে বেপরোয়া ।

নদীর কলকল গীত কানে আসতে

ও শিলা সোপানের ওপর পা পড়তেই টের পেলাম ঘোংটোং এর ঘাটে পৌঁছেছি। 

পাশের বেলাভূমি তে শুইয়ে মহাশ্মশান 

স্থির চিত্তে ক্ষণেক দাঁড়ালাম সেখানে

 নিকষ কালো অন্ধকারের দিকে মুখ করে

কোথায় ঘাটে কেউ তো ধবধবে সাদা থান পরে বসে নেই

বা উল্টো পায়ে হাঁটছে না তো কেউ

শুনতে পাই না কোনো অতৃপ্ত বিদেহীধারীর ক্রন্দন। 

খিলখিলিয়ে হাসছে না তো কেউ

ঘুঙুরের শব্দ কানে আসে না তো

শুধুই ছাইভস্ম আর আধপোড়া চিতাকাঠ

পৃথিবীটা এমন খালি খালি কেন

এমন শুন্যে ভরা। 

ভীষণ নাই নাই বোধ হয়। 

আরও একদিন ভরা সন্ধে অনেক দূরের 

তোর্সা পারে

বসেছিলাম একা চুপটি করে 

তাঁর প্রস্তর নির্মিত বুকে। 

যেখানে সামনে দেখা যায় আকাশ নেতিয়ে পড়েছে পাহাড়ের চূড়ায়

পিছনে খরস্রোতার নীলাভ ঢেউ

ধূসর আকাশের সাথে মিশে

ধূসরতায় খেই হারিয়েছে। 

অনতি দূরেই পাখিরা দল বেধে গৃহাভিমুখে ছুটছে।

আর আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল বিশাল মরা গাছ

তাদের পাতা আছে ফুল আছে ফল আছে

সব আছে

নেই শুধু প্রাণ

কাঠ হয়ে শুধু ঠায় স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে থাকা। 

এদের দেখেই আমার গা শিউরে ওঠে। 

আকাশে নয়া চাঁদ গজিয়ে এল

আমি তোর্সার  হিমশীতল জলে শরীর ডুবালাম, স্নান সেরে নিলাম

 –এ অদ্ভুত নির্জনতায়।

আবছা অন্ধকারে কিছুক্ষণ হাঁটলাম একা

কোথায় কোনো বন্য আমায় গিলে ফেলল না তো

কোনো দুষ্ট প্রেতাত্মা আমার ঘাড় মট কালো না তো

পৃথিবীটা এমনি খালি এমনি ফাঁকা যে

ভীষণ নাই নাই বোধ হয়। 

চারদিকে শুধু ছাইভস্ম আর আধপোড়া চিতাকাঠ।