খসে পড়া পলেস্তারা
ঘুম ভাঙার পরও আমি চোখ খুলছি না,
যদি দেখি তুমি নেই!
তুমি নেই জেনেও আমি হারাতে চাইছি না তোমাকে।
মৃত পলেস্তেরার মতো খসে পড়তে স্মৃতির দেয়াল থেকে,
নিস্তরঙ্গ রোদ্দুর মিশে যায় মেরুন ঠোঁটে।
আমি বাসস্টপে, ঘড়ি নেই হাতে,
ধুলোর সমুদ্রে অপেক্ষা করে যাই একটা বজ্রপাতের।
নির্ভেজাল একটা মৃত্যুর।
কাঁচা বাঁশের অস্থিমজ্জা চিবিয়ে খাওয়া
ঘুন পোকার কোষে কোষে আমি কবিতা লিখি।
দখিনা বাতাসে আমি গন্ধ পাই মরে যাওয়া গল্পের আর প্রাগৈতিহাসিক প্রেমের আহ্বানের।
তোমার চুলে গাঁথা বিপ্লবী লাল জবা,
অস্তমিত সূর্যের ফানুস, সবকিছু মিথ্যা
বানোয়াট, বেয়নেটের খোঁচা।
আমি মৃত্যু এঁকে যাই তোমার শরীর ছুঁয়ে যাওয়া বৃষ্টির ফোঁটায়।
উল্টো ঘোরা ঘড়ির কাঁটা, সায়োনাইড পিল ও সিলিং ফ্যানের পাখা।
একবার স্পর্শ করলেই আমি আবরনহীন নগ্ন নদী হয়ে বয়ে যাব চিরকাল।
শেষবার যখন আমার গর্ভবতী গোলাপ চারা তার শেষ ফুল প্রসব করল,
আমি তখন বন্দুকের নল দিয়ে কবিতা লিখছি শত্রুর ফুটো মস্তকে।
মর্টারের আঘাতে গোড়ালি থেকে বাম পাটা নেই, কানের পর্দা ছিঁড়ে গেছে হালকা করে ভাজা ডিমের টুকরোর মতো।
আমি এক পায়ে কুতকুত খেলে এগিয়ে যাচ্ছি তোমার গহীন নীপবনে।
গণতন্ত্রের গর্ভপাত
মৃগবনের গহীন গোপনে,
সে প্রজাপতি হয়ে বসেছিলে ফুলে।
রঙের ঝলকানি আর নকশার ভিড়ে
যারে চিনতাম তারেও অচেনা লাগে ।
জেগে-জেগে সে স্বপ্ন দেখতো, ঘুমালে মেলতো চোখ।
শাসকের চাবুক কামড়ে ধরতো
খুলতো চাবি তালার ঘায়ে।
সূর্যের নিচে অগ্নিদেবতা_
চাঁদের আলোয় লিখতো কবিতা।
বাকহীন সব অন্ধ প্রজারা
ধরতো ছায়া আলোর পিছে।
শক্তহাতে লাগাম টেনে গাধা হতে তাদের মানুষ করে।
বুলি দিয়ে মুখে, অস্ত্র গুঁজে হাতে
বুকে ভরে দিতো সাহস ফুঁকে।
সিংহরূপি বলবান, সুপুরুষ; গোত্রহীন কাফেলার নেতা।
তার পিছে মোরা শক্তি পেতাম
চিৎকার করে অস্ত্র উঁচাতাম।
গনতন্ত্রের গর্ভপাতে;
স্বৈরাচারী ধুলায় মিশাতাম।
কালরাত্রি ঝড়ের শেষে
স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মলগ্নে
শ্বেতপদ্ম শিশির ভেজা।
প্রজাপতির সুরে ঘুমায় সে নেতা।
ভৃঙ্গরাজের নিয়তি
অতঃপর আমরা নিজকর্মে ব্যস্ত থাকিলাম,
কদাচিৎ স্মৃতি-স্রোত দোলা দিয়ে গেলেও
আমার নিরব রহিলাম।
ভুলিতে লাগিলাম, ভুলিতে না চহিয়াও
মুছিতে মুছিতে সকল কিছু মুছিয়া ফেলিলাম।
এক গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় হাসনাহেনার অসম্ভব গন্ধে
আমি তার খোঁপায় গুঁজা গন্ধহীন রক্ত-জবার মিল পেলাম।
মিল খোঁজার কোনো প্রয়াস আমার ছিলোনা
হয়তো ছিলো তবে খুব গভীরে।
দৃশ্যমান জগৎ আর প্রখর অন্ধকারে
দোদুল্যমান চেতনা কিছুটা ফিকে হয়ে আসে।
ভৃঙ্গরাজ যেভাবে পদদলিত, উপেক্ষিত হয় বারবার
আমার হৃদয় হয়েছিল তোমার হাই হিলের নিচে_
সাথে ছিল অংকের খাতায় কিছু ছন্দহীন কবিতা।
বর্ষা শেষে মরা কদমের ন্যায় অতীত খামচে আমি বাঁচতে চাইনি।
যে ভবিষ্যতে আমি থাকবো কি-না তার নিশ্চয়তা নেই
তার কথা ভেবে আতংকে চিৎকার করতে চাইনি।
চেয়েছিলাম শুধু একটুখানি ভালোবাসা আর সামান্য সহানুভূতি।
তুমি, আমি এবং শিশির ভেজা তারারা মিলে
রচনা করেছিলাম কত শিরোনাম বিহীন আখ্যান-উপাখ্যানের।
যদিও আমরা নিশ্চুপ ছিলাম, চোখ ছিল বন্ধ।
সেদিন আবার এসেছিল স্বপ্নটা, ছদ্মবেশে,
অনেকটা সুখকর তবে শেষটায় বিচ্ছেদ।
কয়েক যুগ পর নত-মস্তক যদি জনসমুদ্রে
দেখা হয়, চোখ তুলে চাইবে, একবার?
Social Plugin